সন্তান জন্ম দেয়া সহজ। কিন্তু সফল ও যোগ্য পিতা-মাতা হওয়া কঠিন। সন্তান মানুষ করা আরও কঠিন। পিতা-মাতার কাছে সন্তান অমূল্য সম্পদ। তাদের ঘিরেই থাকে সব স্বপ্ন। অথচ সফল পিতা-মাতা কি করে হ’তে হয় অধিকাংশ মানুষই তা জানেন না বা জানলেও অনুসরণ করেন না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। সন্তানদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে, সন্তানরা বিপথগামী হচ্ছে, মানসিক যন্ত্রণা ও দ্বন্দ্ব বাড়ছে। পশু-পাখির বাচ্চা জন্ম নিয়েই দৌড়ায়। কিন্তু মানব সন্তানকে যে যত্ন ও নিয়ম করে হাঁটতে-দৌড়াতে শিখাতে হয়।মনে রাখতে হবে শিশুরাই একটি দেশ, সমাজ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। তাই এরাই সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পাওয়ার দাবীদার।এই বয়সে তারা যা শিখে বা তাদের যা শেখানো হয়, তার ভিত্তির উপরই গড়ে ওঠে তাদের তথা জাতির ভবিষ্যত। অথচ শিশুরা আজ যে শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা পাচ্ছে, তাতে তারা আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে পারছে না। প্রকৃত শিক্ষা বলতে যা বোঝায় তা শুধু স্কুল-কলেজের লেখাপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চারিত্রিক ও আত্মিক উন্নয়নের বিষয়গুলোও এ শিক্ষার সঙ্গে জড়িত। আজকাল শিশুরা মারামারি, চুরি, ডাকাতি, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, সন্ত্রাস এমনকি হত্যাকান্ডসহ নানাঅপরাধে জড়িত হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের নিষ্ঠুরতা ও সহিংস প্রবৃত্তি গ্রাস করছে কেন? সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে বিকশিত হওয়ার বদলে কেন তারা অমানুষে পরিণত হচ্ছে? এই প্রশ্নের সদুত্তর খোঁজারদায় সমাজের সচেতন সবারই। জন্মের পর থেকেই শিশুর শিক্ষা শুরু হয়। শিশুর শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু হয় মায়ের কাছ থেকে তথা পরিবার থেকে। একটি শিশুকে গড়া মানে একটি জাতি গড়া। আর জাতি গড়ার এ মহান দায়িত্ব ন্যস্ত হয় বাবা-মা ও পরিবারের উপর। একারণেই সন্তান লালনের আগে কিছু কিছু বিষয়ে বাবা-মায়ের প্রস্ত্ততি নেয়া অত্যাবশ্যক। অন্য কিছুতে গাফলতি করলেও এ বিষয়ে গাফলতি ঠিক নয়। কারণ এর সঙ্গে সমাজ ও জাতির ভবিষ্যত জড়িত। ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য যে ধরনের প্রস্ত্ততি চলে, তেমনি শিশুর চারিত্রিক উন্নয়ন সাধনে দৃঢ় প্রচেষ্টা দরকার। সোনার মানুষ গড়ার জন্যও প্রয়োজন কঠোর সাধনা। আমরা শিশুর শারীরিক বিষয়ে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছি কিন্তু তার মানসিক বিকাশ, তার চিন্তা-চেতনা সঠিকভাবে গড়ে উঠছে কি-না সে বিষয়ে আমরা তেমনভাবে গুরুত্ব দিচ্ছিনা। ফলে অধিকাংশ শিশুরা ত্রুটিপূর্ণ চিন্তা-চেতনায় এবং অভ্যাসে বড় হয়ে উঠে এবং বড় হয়ে ঐ সকল বদ অভ্যাস ও ত্রুটিগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্যাগ করতে পারে না। যেমন দুই/তিন বছরের অনেক শিশুকে দেখা যাবে, জিনিসপত্র নষ্ট করছে, যা খাচ্ছে অর্ধেক ফেলে দিচ্ছে, টেবিলে-সোফায় লাফালাফি করে জিনিসপত্র ক্ষতি করছে। খেলনাপত্র ভাংচুর করছে। অন্য বাড়িতে গিয়ে সাজানো জিনিসপত্র নাড়াচাড়া বা নষ্ট করছে। জানালা দিয়ে বাইরে জিনিস ফেলছে। অথচ মমতাময়ী মাতা খুশী মনে বলছেন, আমার সন্তান দারুণ প্রাণচঞ্চল, দারুণ দুষ্ট।এসব কথা তারাই বলেন, যারা নিজেরা ঐভাবে বড় হয়েছেন এবং এ বিশৃঙ্খলভাবে বেড়ে উঠাকেই সঠিক মনে করছেন। অনেক মায়েরা এও বলে থাকেন,বাচ্চামানুষ করবেই তো, বড় হ’লে ঠিক হয়ে যাবে। অথচ এটা একেবারেই ভুল কথা। বড় হ’লে শিখবে না। বরং এসব বদ অভ্যাস, বিশৃঙ্খল কাজ ছেড়ে দিতে কষ্ট হবে। বাচ্চারা ৬ মাস থেকেই ভালমত শিখতে শুরু করে। আদর যেমন বোঝে, ধমকও বোঝে।ভালো কাজ, খারাপ কাজ শেখারবা বোঝার ক্ষমতা ঐ সময় থেকেই শুরু হয়ে যায়। যেমন দু’বছরের কোন শিশুকে দেখবেন চকলেটের কভার খুলে ঘরের কোণে রাখা ডাস্টবিনে গিয়ে ফেলছে। কোন নতুন বাসায় গিয়ে শোপিস দেখছে, কিন্তু ধরছে না। যাতে ভেঙ্গে না যায়। দু’বছরের বাচ্চারা নিয়ম-শৃঙ্খলা, সৌন্দর্যবোধ, গুছিয়ে রাখা, নষ্ট না করা, কোনটা করা উচিত এবং উচিত নয় তা বোঝার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। বরং আমরা অভিভাবকরা বুঝি না তাদের কিভাবে শেখানো উচিত। কারণ ঐ শিশুর ব্লাংক ব্রেন সফটওয়ারে সবকিছু বুঝতে চায়, জানতে চায় এবং সে তার ব্রেনে দ্রুত সবকিছু সংরক্ষণ করে রাখে। ছয় বছরের মধ্যে শিশুরা ব্রেনের পূর্ণতা পেয়ে যায়। ঐ বয়সে সে যা কিছু দেখে, শোনে, বোঝে পরবর্তী জীবনে তার প্রতিফলন ঘটে। স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা অথবা উদারতা, মায়া-মমতা প্রভৃতি ইতিবাচক বা নেতিবাচক গুণাবলিতে বিকশিত হয়। এসময় যা ইনপুট হবে পরবর্তী জীবনে তাই আউটপুট হবে। সুতরাং এই সময়টি শিশুদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবচেয়ে আদরের সন্তানকে আদব-কায়দায়, সৃষ্টিশীলতায় এবং কিভাবেআদর্শ মানুষ করতে হয় এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নিম্নে বিষয় আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
Post Top Ad
Your Ad Spot
Tuesday, April 10, 2018
সন্তান জন্ম দেয়া আর সফল মাতা-পিতা হওয়া এক জিনিস নয়
Tags
Fun amp; Lifestyle Menu#
Share This
About Raihanul Haque
Fun amp; Lifestyle Menu
Labels:
Fun amp; Lifestyle Menu
Post Top Ad
Your Ad Spot
Author Details
----