গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বাংলাদেশে চালু হয়েছে ৪জি, যা এখনও টেলিকম সেক্টরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খুব বেশি এলাকায় তাদের ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু করতে পারেনি, যদিও রবি বলছে কোম্পানিটি দেশের ৬৪ জেলায় ফোরজি বা ৪.৫জি চালু করেছে।জিপির ফোরজি ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় চালু হয়েছে। বাংলালিংকের ফোরজি ২১শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বাগেরহাট ও যশোরের কিছু কিছু এলাকায় চালু হয়েছে বলে তাদের কাস্টমার কেয়ার থেকে জানা গেছে। বিটিআরসির ৪জি নীতিমালা অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটরগুলো লাইসেন্স পাওয়ারদেড় বছরের মধ্যে দেশের সব জেলা শহরে সেবাটি চালু করতে হবে, তিন বছরের মধ্যে সব উপজেলায় ৪জি নিতে হবে। প্রত্যেক অপারেটরই বলছে দ্রুততম সময়ে তারা ৪জি নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেবে। টেলিটক আরও কিছুদিন পর ৪জি চালু করবে।আপনি হয়ত ইতোমধ্যেই লক্ষ করেছেন, জিপিও বাংলালিংক তাদের নতুন এই সেবার নাম ৪জি বললেও রবি বলছে ৪.৫জি। বিষয়টি লক্ষণীয়। তবে কি ফোরজির চেয়ে ভিন্ন কিছু চালু করল রবি? প্রশ্নটি আমাকে অনেকেই করেছেন, যার উত্তর খুঁজব এই পোস্টে।৪জি কী?চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা ৪জির আদর্শ মান প্রথম প্রকাশ করাহয় ২০০৮ সালে। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন এই মান নির্ধারণ করে। প্রাথমিকভাবে ৪জি এর সর্বোচ্চ স্পিড ধরা হয় ১০০ মেগাবিট/সেকেন্ড, যেখানে ৩জি এর স্পিড ৭.২ থেকে ৫২ এমবিপিএস এর মত। তখনমোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদাতা কোম্পানিগুলো বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করেও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে১০০ এমবিপিএস পিক স্পিড তুলতে সমর্থ হচ্ছিলনা। অপরদিকে আন্তর্জাতিক আদর্শ মান হওয়ার কারণে তারা মূল ৪জি এর মানের কাছাকাছি সেবা দিলেও ৪জি বলতে পারছিলনা। তখন ফোরজির সাথে আরেকটি কথা ‘এলটিই’ বা ‘লং টার্ম ইভল্যুশন’ জুড়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলো ৪জি এবং তার পরের প্রজন্ম ৫জি এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সময় ৪জি এলটিই’র ধারণা শুরু হয়। এটি থ্রিজির চেয়ে দ্রুত গতির, কিন্তু ঠিক ৪জি নয়। ৪জি এলটিই বললে অপারেটরগুলোর পিক স্পিড ১০০ এমবিপিএস করার বাধ্যবাধকতা কমে আসে। সুতরং তখনকার “৪জি এলটিই”র চেয়ে মূল ফোরজির গতি বেশি ছিল।৪.৫জি কী?প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে ৪জি এলটিইর উন্নতি হতে থাকে। ৫জি বাজারে আসতে ২০২০, এমনকি ২০২৭ সাল লেগে যেতে পারে। তাই এর মধ্যে ৪জি নেটওয়ার্কের যে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে তা কাজে লাগাতেচায় নেটওয়ার্ক সেবাদাতা কোম্পানিগুলো। ফোরজি চালু হয় ২০১৩ সালে। এরপর নেটওয়ার্কের স্পিড বৃদ্ধির প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু সেটা ৫জি বলার মত যথেষ্ট নয়। আর এজন্য ৫জি’র চেয়ে কম গতির কিন্তু ৪জির চেয়ে বেশি গতি সম্পন্ন নেটওয়ার্ককে ৪.৫জি বলে বাজারজাত করা হচ্ছে। ৪.৫জি এর অপর নাম ৪.৫জি- এলটিই অ্যাডভান্স প্রো (অথবা এলটিই এ)। ৪.৫জি এর সর্বোচ্চ স্পিড ১জিবিপিএস বাতারও বেশি।বাংলাদেশে ৪জি ও ৪.৫জি সেবা কেমন হবে?আপনি যদি বাংলাদেশে থ্রিজি ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে এখানে এর উপলভ্য স্পিড সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকার কথা। মোবাইল ইন্টারনেটের স্পিড অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন- মোবাইল অপারেটরের ক্যাপাসিটি, গ্রাহকদের মোবাইল হ্যান্ডসেটের ক্ষমতা, নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা, একই সময়ে ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রভৃতি। এই সবকিছু মিলিয়ে আপনি থ্রিজির সেবা যেমন পেয়েছেন, ফোরজি তার থেকে ভালো হবে বলেই আশা করা যায়।বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরগুলো বলেছেতারা মোবাইলে থ্রিজির চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ গতির ইন্টারনেট সার্ভিস দেবে ফোরজিতে। সেটা ৭ মেগাবিট/সেকেন্ড (আশেপাশে) হতে পারে (সেকেন্ডে ১ মেগাবাইট ডেটা ট্র্যান্সফার)। বর্তমানে বিশ্বে ফোর-জি প্রযুক্তির অ্যাভারেজ স্পিড ১৬.৬ এমবিপিএস। ভারতে বর্তমানে গড় ৪জিস্পিড ৬.১৩ এমবিপিএস। সিঙ্গাপুরে গড় ফোরজি স্পিড সবচেয়ে বেশি, আর তা হচ্ছে ৪৬.৬৪ এমবিপিএস। যত এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড বা ‘mbps’), তাকে ৮ দিয়ে ভাগ করলে মেগাবাইট পার সেকেন্ড(MB/second) পরিমাপ পাওয়া যায়।ফোরজি ইন্টারনেটে খরচ কেমন?প্রযুক্তিগতভাবে থ্রিজি’র চেয়ে ফোরজিতে তুলনামূলক কম খরচ হয়। ফোরজি চালু হলে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম বর্তমানের তুলনায় খুব বেশি বাড়বে না বলে জানিয়েছেন গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি।তাহলে রবি ৪.৫জি নেবো নাকি গ্রামীণফোন৪জি কিংবা বাংলালিংক ৪জি?আপনি কোন অপারেটরের সেবা নেবেন তা আপনার এলাকা, নিজের এবং আশেপাশের মানুষের ব্যবহারের অভিজ্ঞতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টেলিটক এখনো ৪জি চালু করেনি, করলে তাদের স্পেসিফিকেশন জানা যাবে। আপনার হয়ত মনে আছে, বাংলাদেশে যখন থ্রিজি এলো, তখন রবি বলেছিল তারা ৩.৫জি নিয়ে এসেছে। সেসময় গ্রামীণফোন বলেছিল যে জিপি ৩.৯জি সেবা দেবে। অর্থাৎ, উভয় অপারেটরই থ্রিজির চেয়ে বেশি কিছু দেয়ার প্রত্যাশা প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাস্তবে আপনি কোন অপারেটরের ৩জি সেবা কেমন পেয়েছেন তা আপনি নিজেকেপ্রশ্ন করলেই জেনে যাবেন। যদিও, মোবাইল অপারেটরগুলোর ফেসবুক পেজে (জিপি, রবি, বাংলালিংক) যখন ৪জি এর ঘোষণা এলো, তখন (এবং আগেও) গ্রাহকদের একটা অংশ ৩জি নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে সন্তুষ্টিও জানিয়েছেন।বোনাসঃ বাংলাদেশে আইফোনে ৪জি পেতে দেরি হবে?তো, এই হচ্ছে অবস্থা! বিজ্ঞাপনে যাই লেখা থাকুক না কেন, বাস্তবতা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন আসলে কোন অপারেটরের ফোরজি সেবা আপনার ব্যবহার করা উচিত। বাংলাদেশে ৩জি/৪জি ব্যবহার করে আপনারঅভিজ্ঞতা দয়া করে কমেন্টে জানান, যাতেসবাই এ ব্যাপারে একটা সম্যক ধারণা পেতে পারেন।
Post Top Ad
Your Ad Spot
Saturday, February 24, 2018
রবি ৪.৫জি, জিপি ৪জি ও বাংলালিংক ৪জি সম্পর্কে যা আপনার জানা উচিত
Tags
Robi Free Internet Offer#
Share This
About Raihanul Haque
Robi Free Internet Offer
Labels:
Robi Free Internet Offer
Post Top Ad
Your Ad Spot
Author Details
----