Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Monday, October 16, 2017

‘ব্লু হোয়েল গেম’ থেকে বিরত থাকতে করণীয়

অবসরে স্মার্টফোনে গেম খেলার পরিণতি এতটা ভয়ানক হতে পারে কদিন আগেও কে ভেবেছিল তা? কিন্তু এখন ভাবতে হচ্ছে তা। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আতংকের নাম হয়ে দাঁড়ানো ‘ব্লু হোয়েল’ গেম কেড়ে নিয়েছে অনেক তরুণ প্রাণ। এর পরপরই মানুষ অনুধাবন করছে আপাত সাধারণ অনলাইন ভিত্তিক একটি গেমও কতটা মারাত্মক হতে পারে। আতঙ্কের পুরো নাম ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম’। যেখানে একজনকে অতি সহজে বোকা বানিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় গেমটির এ্যাডমিন। গেমটি খেলতে খেলতে ব্যবহারকারীরা এতটাই আসক্ত হয়ে পড়ছে যে এক সময় আত্মহত্যা করতেও হৃদয় কাঁপছে না তাদের।পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে এই গেমটির বিপক্ষে স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালাচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের এ গেম খেলা থেকে বিরত রাখার জন্য রীতিমত চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সেসব দেশের বিশেষজ্ঞরা।কী এই ব্লু হোয়েল গেম ?অনলাইন ভিত্তিক একটি গেম। অনলাইনে একটি কমিউনিটি তৈরি করে চলে এ প্রতিযোগিতা। এতে সর্বমোট ৫০টি ধাপ রয়েছে।আর ধাপগুলো খেলার জন্য ঐ কমিউনিটির অ্যাডমিন বা পরিচালক খেলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দিবে। আর প্রতিযোগী সে চ্যালেঞ্জ পূরণ করে তার ছবি আপলোড করবে। শুরুতে মোটামুটি সহজ এবং কিছুটা চ্যালেঞ্জিং কাজ দেয়া হয়। যেমন: মধ্যরাতে ভূতের সিনেমা দেখা। খুব সকালে ছাদের কিনারা দিয়ে হাঁটা এবং ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁকা।তবে ধাপ বাড়ার সাথে সাথে কঠিন ও মারাত্মক সব চ্যালেঞ্জ দেয় পরিচালক। যেগুলো অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এ খেলার সর্বশেষ ধাপ হলো আত্মহত্যা করা। অর্থাৎ গেম শেষ করতে হলে প্রতিযোগীকে আত্মহত্যা করতে হবে।কেন যুবক–যুবতীরা আকৃষ্ট হচ্ছে?সহজ ও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সাহস আছে কি না এমন কথায় সাহস দেখাতে গিয়ে দিনকে দিন যুবক-যুবতীরা আকৃষ্ট হচ্ছে এই গেমে। তবে একবার এ খেলায় ঢুকে পড়লে তা থেকে বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব।তেমনি জানা যায় গেম থেকে বেঁচে ফিরে আসা ভারতীয় এক যুবকের কাছ থেকে তিনি জানান, ব্লু হোয়েল গেমটা আসলে একটা ভয়ঙ্কর মরণ ফাঁদ। ইচ্ছে থাকলেও যে ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। সেই হাতছানিই প্রায় আত্মহত্যার পথে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ভারতের পুদুচেরির যুবক ২২ বছর বয়সী আলেকজান্ডারকে। কিন্তু শেষমেশ পুলিশ পুদুচেরির করাইকালে তার বাড়িতে ঢুকে পড়ায় আর আত্মঘাতী হতে পারেনি আলেকজান্ডার।পুলিশ যখন তাকে বাঁচায়, তখন আলেকজান্ডারের হাতে আঁকা ছিল নীল তিমি। এক পদস্থ পুলিশ কর্তার পাশে বসেআলেকজান্ডার বলেছেন, ‘‘এটা পুরোপুরি মরণ ফাঁদ। ওই গেমে ঢুকে পড়লেই ভয়ে কাঁপতে হবে। অ্যাডভেঞ্চার যাদের খুব ভাল লাগে, তারাও ভয়ে কাঁপতে থাকবেন। আমি সবাইকে বলছি, বড়ই ভয়ঙ্কর গেম ব্লু হোয়েল। কেউ যেন ভুল করেও ওই মরণ ফাঁদে না পড়েন। ’’খেলার মাঝপথে বাদ দিতে চাইলে প্রতিযোগীকে ব্লাকমেইল করা হয়। এমনকি তার আপনজনদের ক্ষতি করার হুমকিও দেয়া হয়। আর একবার মোবাইলে এই অ্যাপটি ব্যবহারের পর তা আর ডিলিট করাযায় না।গেমটি ঠিক কোনও অ্যাপ নয়। নয় কোনও গেমও। এটা জাস্ট একটা লিঙ্ক। আর সেটা চালান একজন অ্যাডমিন। ওই গেম খেলতে যিনিই ঢোকেন, তাকে কয়েকটি টাস্ক দেন অ্যাডমিন। প্রত্যেক দিন সেই টাস্কগুলো রাত ২ টার পর শেষ করতে হয়। ওই গেম খেলতে ঢোকার পর কয়েকটা দিন কাটে মোটামুটি স্বাভাবিক ভাবেই। তখন অ্যাডমিন সকলের ব্যক্তিগত পরিচিতি ও ফটোগ্রাফ সংগ্রহ করতে শুরু করেন। তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন অ্যাডমিন।কোথায় জন্ম এই মরণ খেলার?ইন্টারনেট বলছে, এই খেলার জন্ম রাশিয়ায়। জন্মদাতা ২২ বছরের তরুণ ফিলিপ বুদেকিন। ২০১৩ সালে রাশিয়ায় প্রথম সূত্রপাত। ২০১৫ সালে প্রথম আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। তবে এহেন গর্হিত কাজের জন্য নিজেকে অপরাধী না বলে বরং সমাজ সংস্কারক বলে নিজেকে অভিহিত করে বুদেকিন। সে জানায়, এই চ্যালেঞ্জের যারা শিকার তারা এ সমাজে বেঁচে থাকার যোগ্য নয়।ব্লু হোয়েল গেম এর ৫০ টি ট্যাস্ক থাকে যা আপনাকে সুইসাইড পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এই খেলার সমাপ্তি ঘটবে খেলোয়াড়ের মৃত্যু দিয়ে। এ গেম নিয়ে রীতিমতো অবাক রাশিয়া পুলিশ। তদন্তের পর তারা জানায় অন্তত ১৬ জন কিশোরী এ গেমের কারণে আত্মহত্যা করেছে। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৩০ জনের আত্মহত্যার জন্য এ গেম দায়ী। তবে এ গেমের মূল অ্যাডমিন বুদেকিন আটক থাকলেও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। যার ফলে এ গেমের প্রভাব বিরাজমান।এর থেকে বাঁচতে কি করতে হবে?১। প্রথমত চাই আপনার সচেতনতা। কেন আপনি অপরের নির্দেশনায় যাকে আপনি কখনও দেখেন নি, যার পরিচয় জানেন না তারকথায় কেন নিজের জীবন অকালে বিলিয়ে দিবেন!২। এই রকম কোনও লিংক আসলে তাকে এড়িয়ে চলা। সমাজের তরুণ ছেলে-মেয়ে থেকে শুরুকরে সব বয়সীদের মাঝে এই গেমের আদ্যোপান্ত সম্পর্কে বলা।৩। আপনার সন্তানকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখলে, খেয়াল করুন সে কি করছে। সন্তানকে কখনও একাকী বেশি সময় থাকতে না দেয়া এবং এই সব গেমের কুফল সম্পর্কে বলা।৪। সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা। যাতে করে তারা বুঝতে পারে আত্মহত্যা করা বানিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় পাপের কাজ।৫। আপনার সন্তান ও পরিবারের অন্য কোন সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কি না সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেয়া।৬। কৌতুহলী মন নিয়ে এই গেমটি খেলার চেষ্টা না করায় ভালো। কৌতুহল থেকে এটি নেশাতে পরিণত হয়। আর নেশাই হয়তো ডেকে আনতে পারে আপনার মৃত্যু।অতএব, দয়া করে এই গেমটি কেউ খেলবেন না, কাউকে খেলতেও দেবেন না।সূত্র-ডিএমপিনিউজ

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages