Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Thursday, March 15, 2018

বিমানের ব্ল্যাক বক্স সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার জানা দরকার

উড়োজাহাজ কোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে সেই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সবচেয়ে সঠিক ধারণা লাভ করতে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি দরকার তা হল এর ব্ল্যাক বক্স। আপনি হয়ত ইতিপূর্বে ব্ল্যাকবক্স শব্দটি শুনে থাকবেন, কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে এটি আসলে কী এবং কীভাবে কাজ করে? আপনার যদি সেই কৌতূহল থাকে, তাহলে তা যথাসম্ভব মেটানোর জন্যই আজকের পোস্ট।ব্ল্যাক বক্স কী এবং কীভাবে কাজ করে ;বিমানের ব্ল্যাক বক্স হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস যেটির কয়েকটি অংশ থাকে এবং এতেফ্লাইট ডেটা রেকর্ডিং ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং সংরক্ষিত থাকে। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার অংশের নাম সংক্ষেপে এফডিআর, এবং ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারের নাম সিভিআর। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার অংশে বিমানের টেকনিক্যাল বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত হতে থাকে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে প্লেনের গতি, বাতাসের গতি, বিমান কত উঁচুতে উড়ছে, জ্বালানী প্রবাহ, চাকার গতিবিধি প্রভৃতি। বড় আকারের উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্সে এরকম ৭০০ পর্যন্ত প্যারামিটার সংরক্ষণ করা যায়। অপরদিকে, ককপিট ভয়েসরেকর্ডার অংশে বিমান চালকের কক্ষের সকল অডিও/কথাবার্তা রেকর্ড হয়। এতে করে পাইলট ও অন্যান্য ক্রু’র কথাবার্তা ও আলোচনা শুনতে পাওয়া যায়, যা থেকে শেষ মুহূর্তের সমস্যাগুলো সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। ব্ল্যাক বক্স বিমানের পেছনের দিকে অবস্থিত থাকে।এটি আসলে কালো নয়, এমনকি কোনো বাক্সও নয় :নামে ‘ব্ল্যাকবক্স’ হলেও বিমানের ব্ল্যাক বক্স আসলে কমলা রঙের হয়ে থাকে। কমলা রঙ অপেক্ষাকৃত সহজে দৃশ্যমান হওয়ার কারণেই এই ব্যবস্থা। অপরপক্ষে, ব্ল্যাক বক্স আসলে কোনো বক্স বা বাক্সের মত দেখতে নয়। ব্ল্যাকবক্সের কাঠামোতে সবচেয়ে বেশিদৃশ্যমান হয় একটি সিলিন্ডার, যেটি একটি প্ল্যাটফর্মের সাথে সংযুক্ত থাকে। সিলিন্ডারের পাশে বক্স আকারের কাঠামোর মধ্যে এর ব্যাটারি থাকে। আর সিলিন্ডারে থাকে মেমোরি ইউনিট। উড়োজাহাজ ও বিমানচালনা বিদ্যার বিশেষজ্ঞরা এটিকে ব্ল্যাক বক্স বলে না ডেকে বরং ‘ইলেকট্রনিক ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ বলে অভিহিত করেন।রেকর্ডিং টাইমব্ল্যাক বক্সের ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার সাধারণত সর্বশেষ ১৭ থেকে ২৫ ঘন্টার ফ্লাইট ডেটা (বিমানের টেকনিক্যাল/যান্ত্রিক তথ্য) সংরক্ষণ করে রাখে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার পাইলট ও তার কক্ষের সবার কথাবার্তার সর্বশেষ ২ ঘন্টার রেকর্ড রাখে। সলিড স্টেট মেমোরি ড্রাইভ না হলে ম্যাগনেটিক স্টোরেজে এই রেকর্ডিং টাইম ৩০ মিনিটও হতে পারে।এটি অবিশ্বাস্য রকমের মজবুত :ব্ল্যাকবক্স অত্যন্ত মজবুতভাবে তৈরি। এর কাঠামো লিথিয়াম অথবা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি। একটি কংক্রিটের ওয়ালে যদি ৭৫০ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিতে ব্ল্যাক বক্সকে আছড়ে ফেলা হয়, তাতেও এটি টিকে থাকবে। এটি স্থির অবস্থায় ২.২৫ টন ওজন নিয়ে কমপক্ষে ৫ মিনিট অক্ষত থাকতে পারবে। সর্বোচ্চ ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক ঘন্টা পর্যন্ত কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই টিকে থাকবে ব্ল্যাকবক্স। ৬ হাজার মিটার গভীরে পানির নিচের চাপেও একটি ব্ল্যাক বক্স অক্ষত থাকতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হল এর ওয়াটার-সেন্সর। ব্ল্যাকবক্সের বিশেষসেন্সর যখন পানির সংস্পর্শে আসে (সাগর/নদীতে পড়লে) তখন এটি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে সিগন্যাল পাঠায়, যাথেকে উদ্ধারকারী দল এর অবস্থান বুঝে ডিভাইসটি তুলে আনতে পারে। তবে ব্ল্যাকবক্সের ব্যাটারি যতদিন কাজ করবে ততদিনই এটি এই সিগন্যাল পাঠাতে পারবে। সাধারণত, সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত সিগন্যাল পাঠাতে পারে একটি ব্ল্যাক বক্স। আর পানির নিচ থেকে সর্বোচ্চ ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত এই সংকেত আসতে পারে।তথ্য উদ্ধারবিধ্বস্ত কোনো বিমানের ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়ার পর এর তথ্য উদ্ধারের কাজশুরু হয়। স্টোরেজ থেকে ডেটা নিয়ে তা বিশ্লেষণ করতে বিশেষ সফটওয়্যার ও যন্ত্রের দরকার হয়। সব মিলিয়ে এতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এমনকি কয়েক মাসও লাগতে পারে।ভবিষ্যত ব্ল্যাক বক্স :ব্ল্যাক বক্স ও এর ব্যবহারযোগ্যতা উন্নততর করতে ভবিষ্যতে অডিওর পাশাপাশি ভিডিও রেকর্ডিংও রাখার ব্যাপারে কাজ হয়েছে। এছাড়া রেকর্ড করার পাশাপাশি তাৎক্ষণিক তা ভূমিতে কোনো কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারেও আইডিয়া এসেছে। ফলে তথ্য পেতে আর ব্ল্যাকবক্সের অপেক্ষা করতে হবেনা। যদিও এটা এখনও ব্যবহারযোগ্য বাস্তবতার মুখ দেখেনি। কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্য নিয়ে এটা সম্ভব হতে পারে। এছাড়া একই বিমানে একটির স্থলে একাধিক ব্ল্যাক বক্স রাখার ব্যাপারেও মত রয়েছে।শুধু বিমানেই নয়!শুধু বিমান নয়, বরং অন্যান্য যানবাহন যেমন গাড়ীতেও ব্ল্যাক বক্স থাকতে পারে যাকে ইভেন্ট ডেটা রেকর্ডার বলা হয়।

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages