Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Monday, December 25, 2017

[লাইফস্টাইল] দুধের ব্যবহার ও দুধ পানের অভ্যাস !

দুধ প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ পানীয়। খাদ্যের প্রত্যেকটি উপাদান দুধে সুষমভাবে বিরাজমান থাকায় এটিকে সুষম খাদ্যও বলা হয়। মানব শিশু জন্মের পর হতে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খেয়েই জীবন ধারণ করতে পারে। শালদুধ নবজাতকের প্রথম খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও এর অংশ ল্যাকটোগেন্ডাবিউলিন। যার ফলে এটি নবজাতকের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলে।দুধে রয়েছে প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ খাদ্যউপাদান ল্যাকটোজ যা শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ ও স্নায়ুতন্ত্র গঠনও বর্ধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। জন্মের পর হতে ৫-৭ বত্সরের মধ্যেই মানব শিশুর মস্তিষ্কের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ বর্ধিত হয়ে থাকে। বাকী ১০% এর বর্ধন সারা জীবন ধরে চলতে থাকে। তাই শিশু বয়সে মস্তিষ্কের বিকাশ সাধনে দুধের প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। দুধের ল্যাকটোজ মস্তিষ্কের এবং স্নায়ুতন্ত্রের কোষকে সতেজ রাখে বলে দুধ পানে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ পান করলে ভাল ঘুম হয়, কারণ দুধে উপস্থিত এল-ট্রিপটোফেন রক্তে মেলাটোনিন ও সেরোটিনিন তৈরি করে। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ (প্রায় ২৫০ মি.লি.) পান করা প্রয়োজন। এক গ্লাস দুধে যে পরিমাণ (প্রায় ৮ গ্রাম) চর্বি থাকে তাতে হূদরোগ ও রক্তচাপ বাড়ার কোন কারণ নেই। চর্বির গুণগতমান নির্ভর করে তাতে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিডের প্রকারের উপর। সে সকল ফ্যাটে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড বেশি সে সকল ফ্যাটে LDL এর পরিমাণ বেশি এবং HDL এর পরিমাণ কম। অন্যদিকে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড দিয়ে ফ্যাট তৈরি হলে তাতে HDL বেশি ও LDL-এর পরিমাণ কম থাকে।আমরা জানি HDL আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, কারণ এটি শরীরের কোষ, শিরা ও ধমনীতে কলেস্টেরল জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে এবং খাদ্যের কলেস্টেরলকে লিভারে স্থানান্তরিত করে। এখানে উল্লেখ্য যে গরু, খাসীর কিংবা অন্যান্য প্রাণীর মাংসের চর্বিতে প্রায় ১০০% সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান, যার ফলে ঐ ধরনের চর্বিতে LDL বেশি থাকে এবং HDL কম থাকে। অন্যদিকে দুগ্ধ চর্বিতে প্রায় ৬০% সম্পৃক্ত ও ৪০% অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকায় এতে HDL বেশি ও LDL পরিমাণ থাকে বলে দুগ্ধ চর্বি যে কোন মাংসের চর্বির চেয়ে প্রায় ৫০% নিরাপদ। তাছাড়া দুগ্ধ চর্বির এসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড এর বৈশিষ্ট্য HDL এর মত বলে এটিও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দুধের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দুগ্ধ চর্বিতে অবস্থিত কনজুগেটেড লিনোলিক এসিড (CLA) রক্তের প্রস্টাগ্লেন্ডিং PGE-2 এর কার্যকারিতা রোধ করে হূদরোগ থেকে রক্ষা করে থাকে। দুধের বিউটাইরিক এসিড, ক্যাপরাইলিক এসিড এবং কনজুগেটেড লিনোলিক এসিড ক্যান্সার সেলের বর্ধন রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। দাঁতের এনামেলের ক্ষয় ও অসিটওপরোসিস প্রতিরোধে দুধের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দুধের আমিষ প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ আমিষ, এতে রয়েছে সকল প্রকার অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের ব্যাপক সমাহার। দুধের আমিষের শতকরা ৮০ ভাগ হল কেসিন,যা দুধের আমিষ ছাড়া প্রকৃতিতে আর কোন আমিষে পাওয়া যায় না। দুধের আমিষের প্রায় ৯৯% হজম হয়ে থাকে। তাছাড়া পানিতে দ্রবণীয় এবং চর্বিতেদ্রবণীয় সকল প্রকার ভিটামিনও দুধে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। তাই শরীরের বর্ধন, ক্ষয় পূরণ, মেধা বিকাশও সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য অত্যন্ত দরকারী।গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের দুধের উত্পাদান উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও জনগণের মধ্যে দুধ পানের আগ্রহ ঐ হারে না বাড়ার দরুন দুগ্ধখামারীরা দুধ বিক্রিতে সমস্যায় পড়ছেন। উত্পাদিত সকল দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোও কিনতে পারছে না। কারণবাজারের চাহিদা ঐ হারে বাড়ছে না। তাই দুধের উত্পাদন বাড়াতে হলে দুধের ব্যবহার ও দুধ পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মাঝে দুধের উপকারিতার কথা প্রচার করে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।আমরা প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ ন্যাচারাল পানীয় দুধের প্রতি আকৃষ্ট হই। আমরা দুধ উত্পাদন করি, দুধ পান করি এবং শক্তিশালী মেধাবী জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হই।লেখক: ডেয়ারি বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages