Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Tuesday, August 22, 2017

মানুষ পবিত্র হজে হাজরে আসওয়াদবা কালো পাথরে চুমু খেতে হয় যে কারনে?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।আসসালামুআলাইকুম।হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর-ইসলামের ইতিহাসের একটি অনন্যনিদর্শন। পবিত্র হজব্রত পালনের সময়এলেই বিশেষভাবে আলোচনায় আসেএই পাথরটির নাম। পবিত্র হজব্রত বাওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদিআরবে গমনকারী হাজীগণ কমবেশিসবাই-ই বিশেষ এই পাথরটির সাথেপরিচিত। হাজরে আসওয়াদ শব্দ দুটিআরবি। হাজরুন অর্থ হচ্ছে পাথর আরআসওয়াদুন শব্দের অর্থ হচ্ছে কালো।অর্থ্যাৎ হাজরে আসওয়াদ অর্থ হলোকালো পাথর।পবিত্র এই পাথরে চুমু খাওয়ার শরয়ীবিধান বা হুকুম কী? এটা একটিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ বিভিন্ন দেশেরহাজীগণ হজব্রত পালন করতে গিয়ে এইপাথরটিতে সরাসরি বা ইশারা করেচুমু দিয়ে থাকেন। অনেক সময়অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পাথরটিতেচুমু খেতে গিয়ে অনেক সময় অনেকসমস্যায়ও পড়তে হয়। হাদিসেরবিভিন্ন গ্রহণযোগ্য গ্রন্থে হাজরেআসওয়াদ বা কালো পাথরে চুমু খাওয়াসম্পর্কে রাসূল (সা.) -এর নির্ভরযোগ্যবাণী এবং সাহাবাগণের আমলেরবর্ণনা পাওয়া যায়।বিখ্যাত সাহাবী হজরত আব্দুল্লাহবিন ওমরকে (রা.) হাজরে আসওয়াদসম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনিবললেন, ‘আমি রাসূলকে (সা.) পাথরটিস্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি।’ [সহিহমুসলিম : হা. ১২৬৭]এছাড়া রাসূল (সা.) বলেছেন,‘কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদপাথরটি ‘আবু কুবাইস’ পাহাড় থেকে বড়আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তখনপাথরটির একটি জিহবা ও দুটি ঠোঁটথাকবে, হজ পালনের সময় কোন হাজীকোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সেসম্পর্কে পাথরটি তখন বক্তব্য দেবে।[সহিহ ইবনে খুযায়মা : ৪/২২১,মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪৫৭]হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)আরো বলেন যে, রাসূল (সা.) বিদায়হজের সময় একটি উটের ওপর সওয়ার হয়েতাওয়াফ করছিলেন এবং সে সময় তিনিএকটি বাঁকা মাথাওয়ালা লাঠিরমাধ্যমে ইশারা করে হাজরেআসওয়াদকে চুম্বন করেছেন।[ফাতহুলবারী : ৩/৫৩৬ হা. ১৬০৭]হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) একবারহাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার পর বললেন,‘আমি জানি তুমি কেবলই একটি পাথরমাত্র। উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতাতোমার নেই। আমি যদি প্রিয়নবীরাসূলকে (সা.) তোমাকে চুম্বন করতেনা দেখতাম, তবে আমিও তোমাকেচুম্বন করতাম না। এরপর তিনি এইআয়াত পাঠ করলেন- “নিশ্চয় আল্লাহররাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য উত্তমআদর্শ রয়েছে।” [আল-আহযাব : ২১]এ সময় হজরত উবাই বিন কাব (রা.) বলেউঠলেন, ‘নিশ্চয় এই পাথরটির উপকার ওক্ষতি করার ক্ষমতা আছে। আরকিয়ামতের দিন পাথরটি বাকপটুজিহবা নিয়ে উঠবে এবং তাকে যারাচুম্বন ও স্পর্শ করেছে, তাদের ব্যাপারেসে সাক্ষ্য দেবে।’ ঠিক সে মুহূর্তেহজরত আলী বিন আবি তালিব (রা.)তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ,আমীরুল মুমিনীন! নিশ্চয় পাথরটিউপকার ও ক্ষতি সাধন করতে পারে। এছাড়াও আমি রাসূলকে (সা.) বলতেশুনেছি- কিয়ামতের দিন হাজরেআসওয়াদকে জিহবা ও কথা বলারক্ষমতাসহ উপস্থিত করা হবে। আর তখনসে চুম্বনকারী সকল মুসলমানদের পক্ষেসাক্ষ্য দেবে।’ এসব কথা শোনার পরহজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘সে জাতিরজীবন যাত্রার মাঝে কল্যাণ নেই।যাদের মাঝে আবুল হাসান তথা আলীর(রা.) উপস্থিতি নেই।’ [আল-জামে আল-লতিফ ফী ফাযলে মক্কা ওয়া আহলুহাওয়া বিনাউল বাইতিশ শরীফ : পৃ. ৩৫]হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেছেন- তোমরা এই পাথরটিকেবেশি বেশি চুম্বন করো। কারণ তোমরাহয়তো অচিরেই তাকে হারিয়েফেলবে। এমন একটি সময় আসবে যখনলোকেরা রাতের বেলায় পাথরটিকেচুম্বন করে সকাল উঠে তাকে আরদেখতে পাবে না। কারণ, আল্লাহতাআলা কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তেদুনিয়াতে অবস্থিত জান্নাতি সকলবস্তু স্ব-স্থানে ফিরিয়ে দিবেন।[আখবারু মক্কা, আযরুকী : ১/৩৪২-৩৪৩]আলোচ্য হাদিসের মাধ্যমে ইসলামীশরিয়তের এই বিধান সাব্যস্ত হয় যে,হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকেচুমু দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহররাসুলের আনুগত্য করা। আর ইসলামীশরিয়ত মোতাবেক এই চুমু খাওয়াসুন্নাত। তবে কেউ যদি সরাসরিহাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করতে সক্ষমনা হয়, হাত দ্বারা তাকে স্পর্শ করবেবা ইরাশার মাধ্যমে চুমু খাবে।তবে হাজরে আসওয়াদকে চুমু খাওয়ারব্যাপারে একটি বিষয় মাথায় রাখাতেহবে। আর সেটা হলো- এটি একটিনিছক পাথর। গুনাহ মাফ করা বামানুষের উপকার বা ক্ষতি করারকোনো বহ্যিক ক্ষমতা নেই এইপাথরের। রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতহিসেবে এতে চুমু খাওয়া উচিত।এছাড়া রাসূল (সা.) বলেছেন ‘হাজরেআসওয়াদ’ জান্নাতি একটি পাথর, এর রঙদুধের চেয়ে বেশি সাদা ছিল। এরপরআদম সন্তানদের পাপরাশি তাকেকালো বানিয়ে দিয়েছে।’ [জামেতিরমিযী : ৮৭৭, মুসনাদে আহমাদ :১/৩০৭, ৩২৯]আল্লামা আবু আবদুল্লাহ আল-ফাকেহিতাঁর ‘আখবারে মক্কা’ গ্রন্থে হজরতআবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকেএকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসূল(সা.) বলেছেন- ‘ জাহিলিয়াতেরনাপাকি বা অপবিত্রতা যদি হাজরেআসওয়াদকে স্পর্শ না করতো। তবে যেকোনো পাগল-প্রতিবন্ধী বা পঙ্গু তাস্পর্শ করা মাত্রই সুস্থতা লাভ করতোএবং আল্লাহ তাআলা তাকে যেজ্যোতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, মানুষতার সেই আসল আকৃতিতে দেখতেপেত। তবে কালো রঙ দ্বারা তাকেপরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। যাতেদুনিয়াবাসী দুনিয়াতেই জান্নাতেরসৌন্দর্য্য দেখে না ফেলে। আর নিশ্চয়এটি জান্নাতের শুভ্র পাথরসমূহেরএকটি।’ [আখবারু মক্কা, আজরুকী :১/৩২৩, আল-কুবরা, তাবারী : পৃ. ২৯৩]

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages